Wednesday, 29 March 2023

এই শিশুটি সুস্থ থাকলে বদলে যেতে পারে অনেক কিছু

Editor: CanBangla
Sunday, 13 March 2022 1203

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনায় একটি শিশুর হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টে (প্রতিস্থাপন) এমন এক বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে, চিকিৎসকদের আশা যার মাধ্যমে তার শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্রতিস্থাপিত হার্টটিকে প্রত্যাখ্যান করবে না। অর্থাৎ এ ধরনের অপারেশনের পর সাধারণত সারা জীবন ইমিউন সিস্টেম সংক্রান্ত যে ওষুধ খেয়ে যেতে হয়, সেটি আর খাওয়া লাগবে না।  

এ শিশুটির হার্ট প্রতিস্থাপনের সঙ্গে একই ডোনারের থাইমাস টিস্যুও শিশুটির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। হার্ট প্রতিস্থাপনের সময় এই প্রথম এমন কৌশল নেওয়া হলো। ডিউক ইউনিভার্সিটি একটি বিবৃতিতে এসব তথ্য দিয়েছে। ইমিউন সিস্টেম ফাংশনে, বিশেষ করে কোনো মানুষের শরীরে কোনটি তার নিজের কোষ, টিস্যু  আর কোনটি বাইরের কোষ ও টিস্যু তা চেনাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে এই থাইমাস টিস্যু।

আর যেহেতু এস্টন সিনামন নামের শিশুটির শরীরে একই ডোনারের হার্ট ও থাইমাস টিস্যু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাই চিকিৎসকরা আশা করছেন শিশুটির শরীরে প্রতিস্থাপিত হার্টটিকে তার ইমিউন সিস্টেম নিজের শরীরেরই একটা অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করবে। ফলে প্রতিস্থাপিত হার্টটিকে বাইরের কোনো অঙ্গ বলে প্রত্যাখ্যান করবে না ইমিউন সিস্টেম।  

কয়েক দিন আগে ডিউক ইউনিভার্সিটির চিফ অব কার্ডিয়াক সার্জারি ড. জোসেফ টিউরেক একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা মনে করছি যে, একই ডোনারের থেকে হার্ট ও থাইমাস নিয়ে এস্টনের শরীরে প্রতিস্থাপন করায় তার (এস্টন) শরীর ডোনারের হার্টটিকে তার নিজের হার্ট বলেই মনে করতে শুরু করবে।   

এখন শিশুটি ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। যে সব রোগীদের শরীরে কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার পর তাদের শরীর প্রতিস্থাপিত অঙ্গটিকে ক্ষতিকর মনে করে প্রত্যাখ্যান করে তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা অন্য রোগীদের ক্ষেত্রেও এই একই কৌশল কার্যকর হয় কি না সে বিষয়েও আরও বিশদ গবেষণা প্রয়োজন। 

টিউরেক বলছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের এ প্রক্রিয়া যদি সফল হয় তবে সব সলিড অঙ্গ প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রেই সেটা ব্যবহার করা যাবে।  

ডিউক ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, হার্টে বড় ধরনের সমস্যা নিয়েই এস্টনের জন্ম হয় আর তার বয়স যখন মাত্র ৫ দিন তখন তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। কিন্তু এতেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। তখন চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত দেন যে, এস্টনকে বাঁচাতে হলে তার হার্ট প্রতিস্থাপন করতে হবে। 

এরপর চিকিৎসকরা দেখেন শিশুটির থাইমাসেও জটিলতা আছে আর তার থাইমাস টিস্যু প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হবে। ডিউট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা আগে থেকেই পশুদের শরীরে এই হার্ট আর থাইমাস এক সাথে প্রতিস্থাপন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছিলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ আগস্ট এস্টনের হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়, তখন তার বয়স মাত্র ৬ মাস। এর দুই সপ্তাহ পর এস্টনের শরীরে একই ডোনারের শরীর থেকে নেওয়া থাইমাস প্রতিস্থাপন করা হয়।   

এর ১৭২ দিন পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে দেখা যায় শিশুটির শরীরে থাইমাস কাজ করছে এবং তা টি-সেল নামে পরিচিত ইমিউন সেল তৈরি করছে। অবশ্য এস্টনকে এখনও ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তার শরীর প্রতিস্থাপিত হার্টটিকে প্রত্যাখ্যান না করে। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চিকিৎসকরা এ ওষুধ বন্ধ করে দেখবেন তার শরীর প্রতিস্থাপিত হার্টটিকে এখন নিজের অঙ্গ বলে মনে করছে কি না।  

সাধারণত কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর ওই রোগীকে সারাজীবন ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষধু খেতে দেওয়া হয়, যাতে তার শরীর কোনোভাবেই প্রতিস্থাপিত অঙ্গটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে বসে। কিন্তু ড. টিউরেক বলছেন, দীর্ঘসময় এ ওষুধ খেলে তা কিডনির জন্য খারাপ হতে পারে, আবার শেষ পর্যন্ত শরীর প্রতিস্থাপিত অঙ্গটাকে প্র্রত্যাখ্যানও করে। ডিউক ইউনিভার্সিটি বলছে, সাধারণত প্রতিস্থাপিত হার্টগুলো ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারে।   

ড. টিউরেক বলছেন, এস্টনের ক্ষেত্রে যে কৌশল নেওয়া হয়েছে, এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সমস্ত প্রতিস্থাপনের কৌশল বদলে যেতে পারে। 

সূত্র : লাইভ সায়েন্স।